ট্রোজান হর্স ভাইরাসের গল্প ও সতর্কতা
আজকে আমি বর্তমান সময়ের সবচাইতে বিক্ষ্যাত একটি কম্পিউটার ভাইরাসের ট্রোজান হর্সের ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করব!
যে কোন কিছু সম্পর্কে জানতে হলে বা কোন ক্ষতিকর কিছু থেকে বেঁচে থাকতে চাইলে তার পিছনের ইতিহাস ও তার কার্যপদ্ধতি সম্পর্কে জানতে হয়।
ট্রোজান হর্স ভাইরাসটির ইতিহাস জানার চেয়ে এর নামকরনের ইতিহাস জানলেই বরং এর কার্যপদ্ধতি ভালোভাবে অনুধাবন করা যাবে। আর এর নামকরনের ইতিহাস টি জানতে আমাদেরকে বেশি না মাত্র ২০০০ বছর পুর্বে ফিরে যেতে হবে।
সবাই রানী হেলেনের নাম নিশ্চই শুনেছ।গ্রিক মিথোলজি অনুযায়ি সেই সময়ে সে ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরি রমনি।(আপনারা নিশ্চয়ই আমাকে মনে মনে বকা দিতেছ, কিসের মধ্যে কি, পান্তা ভাতে ঘি। ভাইরাসের ভিতর রানী হেলেন আসল কোথা থেকে??? সবুর কর বলছি!!!)
সে ছিল এথেনিয়ান বীর মেনেলাউসের স্ত্রী।আর মেনেলাউস হল রাজা আগামেমনন এর ছোট ভাই একবার ট্রয় নগরের রাজা প্রিয়াম তার সন্তান (রাজপুত্র) প্যারিস কে রাজবার্তা নিয়ে পাঠাল। সেখানে গিয়ে প্যারিস এর সাথে দেখা হল হেলেন এর আর প্রথম সাক্ষাতেই দুজনে প্রেমে পড়ে গেল।ফলাফল প্যারিস তার পিতার মান ইজ্জত সব বিসর্জন দিয়ে তাকে ভাগিয়ে নিয়ে এলো।মেনেলাউস তার ভাই এর কাছে সাহায্য চাইলো। রাজা আগামেমনন এইবার ট্রয় নগর আক্রমনের একটা সুযোগ পেল।কারন ট্রয় নগরের যে সীমানা প্রাচির ছিল তা দীর্ঘ দিন ধরে প্রায় অজেয় ছিল।সে সমস্ত এথেনিয়ান দের নিয়ে ১০০০ যুদ্ধ জাহাজের একটা বিরাট বাহিনী গড়ে তুলল। রাজা আগামেমনন এর বাহিনী ট্রয়ে গিয়ে ১০ বছর ধরে যুদ্ধ করল। যুদ্ধে উভয় পক্ষের বড় বড় অনেক যোদ্ধা নিহত হয় এবং ব্যাপক প্রানহানি ঘটে, এমনকি রাজা প্রিয়াম এর বড় ছেলে হেক্টরও নিহত হল, কিন্তু ট্রয় নগরির সেই প্রাচিরের কোন ক্ষতি করতে তারা সক্ষম হয়নি।
এবার রাজা অডিসিয়াস রাজা আগামেমনন কে একটা দারুন বুদ্ধি দিল অনেকটা হ্যাকারদের মতই,,
তার বুদ্ধিতেই তারা এরকম একটা বিশাল কাঠের ঘোড়া তৈরি করল,,, ভান করল এমন যে আমরা তো তোমাদের পরাজিত করতে পারিনাই, তাই চলে যাচ্ছি, আর যাবার আগে তোমাদের সুর্য দেবতার জন্যে একট উপহার রেখে গেলাম।কিন্তু তার ভিতরেই ছিল ধোকাবাজি,মানে ফলস চেম্বার।ট্রয়ের মানুশ সরল বিশ্বাসে এই উপহার নগরের ভিতর প্রবেশ করালো।ফলাফল এর ভিতরে অবস্থান করা সৈন্যরা রাতের অন্ধকারে বের হয়ে এসে নগরের দরজা খুলে দিল। আর ততক্ষনে এথেনিয়ানরা এসে নগরে প্রবেশ করে এক রাতেই সব ধ্বংস করে ফেলে।তাদের সেই গিফট করা ঘোড়ার থেকেই আমাদের এই ভাইরাসের নাম করন করা হয়েছে ট্রোজান হর্স। কারন এই ভাইরাস টাও ঠিক সেই কাঠের ঘোড়াটির মতই কাজ করে।
সরল মনে আপনি হয়ত আপনার কোন দুষ্ট বন্ধুর দেওয়া কোন লিংক এ ক্লিক করলেন, আর আপনার কম্পিউটার এর পুরো নিয়ন্ত্রন সে নিয়ে নিল।কিন্তু আপনি টেরও পাবেন না। হ্যা টের পাবেন, যখন আপনার ক্ষতির ষোলকলা পুর্ণ হবে।এই ভাইরাস টি আপনার সম্মতি ছাড়া পিসিতে কাজ করতে পারে না।একেবারে ট্রয়বাসি দের মত,তারা যদি নগরে ঘোড়াটি না ঢোকাত, তবে তাদের এই অবস্থা হত না। অনেকটা খাল কেটে কুমির আনার মত।
আপনার পিসিতে প্রবেশ করে সে আপনার সকল কাজে যেমন নজরদারি করতে পারে,তেমনি আপনার ব্যবহার করা ফাইল, অথবা পাসওয়ার্ড বা আপনার অন্যান্য ফাইল পত্র পাঠিয়ে দিতে পারে অন্যের কাছে।
আমরা ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ইংরেজি বইয়ে একটা কথা পড়েছিলাম,, "Prevention is better than cure" এই ভাইরাস টি থেকে বাচার জন্যে প্রিভেনটিভ মিজারে কাজ করাই জরুরি, কারন একবার আক্রান্ত হলে বাচার কোন রাস্তা নাই, উইন্ডোজ সেট আপ দেয়া ছাড়া। আবার কিছু ট্রোজান ভাইরাস আছে যারা আপনার RAM এ রয়ে যায়।সেট আপ দিলেও কাজ হয় না।
এ ক্ষেত্রে আমরা যা করতে পারি, তা হল,প্রথমত কোন ধরনের অপরিচিত ওয়েবসাইটের পক্ষ থেকে আসা ইমেইল এর লিনক এ ক্লিক না করা।দ্বিতীয়ত, আমদের কাছে যদি কোন বন্ধু কোন ফাইল এর লিনক পাঠায় তবে তার থেকে নিশ্চিত হয়ে নেয়া।তৃতীয়ত, অপ্রয়োজনীয় এবং অপরিচিত বিভিন্ন application ব্যাবহার না করা এবং চতুর্থত( অপারেটিং সিস্টেম) পারলে লিনাক্স না পারলে উইন্ডোজের আপডেট ভার্সন অন্তত পক্ষে উইন্ডোজ ৮ ও ১০ ব্যাবহার করা।ইত্যাদি।
আজ এ পর্যন্তই। ভাল থাকবেন।
পোস্টটি লিখেছেন- মারুফ ভাই
যে কোন কিছু সম্পর্কে জানতে হলে বা কোন ক্ষতিকর কিছু থেকে বেঁচে থাকতে চাইলে তার পিছনের ইতিহাস ও তার কার্যপদ্ধতি সম্পর্কে জানতে হয়।
ট্রোজান |
ট্রোজান হর্স ভাইরাসটির ইতিহাস জানার চেয়ে এর নামকরনের ইতিহাস জানলেই বরং এর কার্যপদ্ধতি ভালোভাবে অনুধাবন করা যাবে। আর এর নামকরনের ইতিহাস টি জানতে আমাদেরকে বেশি না মাত্র ২০০০ বছর পুর্বে ফিরে যেতে হবে।
সবাই রানী হেলেনের নাম নিশ্চই শুনেছ।গ্রিক মিথোলজি অনুযায়ি সেই সময়ে সে ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরি রমনি।(আপনারা নিশ্চয়ই আমাকে মনে মনে বকা দিতেছ, কিসের মধ্যে কি, পান্তা ভাতে ঘি। ভাইরাসের ভিতর রানী হেলেন আসল কোথা থেকে??? সবুর কর বলছি!!!)
সে ছিল এথেনিয়ান বীর মেনেলাউসের স্ত্রী।আর মেনেলাউস হল রাজা আগামেমনন এর ছোট ভাই একবার ট্রয় নগরের রাজা প্রিয়াম তার সন্তান (রাজপুত্র) প্যারিস কে রাজবার্তা নিয়ে পাঠাল। সেখানে গিয়ে প্যারিস এর সাথে দেখা হল হেলেন এর আর প্রথম সাক্ষাতেই দুজনে প্রেমে পড়ে গেল।ফলাফল প্যারিস তার পিতার মান ইজ্জত সব বিসর্জন দিয়ে তাকে ভাগিয়ে নিয়ে এলো।মেনেলাউস তার ভাই এর কাছে সাহায্য চাইলো। রাজা আগামেমনন এইবার ট্রয় নগর আক্রমনের একটা সুযোগ পেল।কারন ট্রয় নগরের যে সীমানা প্রাচির ছিল তা দীর্ঘ দিন ধরে প্রায় অজেয় ছিল।সে সমস্ত এথেনিয়ান দের নিয়ে ১০০০ যুদ্ধ জাহাজের একটা বিরাট বাহিনী গড়ে তুলল। রাজা আগামেমনন এর বাহিনী ট্রয়ে গিয়ে ১০ বছর ধরে যুদ্ধ করল। যুদ্ধে উভয় পক্ষের বড় বড় অনেক যোদ্ধা নিহত হয় এবং ব্যাপক প্রানহানি ঘটে, এমনকি রাজা প্রিয়াম এর বড় ছেলে হেক্টরও নিহত হল, কিন্তু ট্রয় নগরির সেই প্রাচিরের কোন ক্ষতি করতে তারা সক্ষম হয়নি।
এবার রাজা অডিসিয়াস রাজা আগামেমনন কে একটা দারুন বুদ্ধি দিল অনেকটা হ্যাকারদের মতই,,
ট্রোজান হর্স |
তার বুদ্ধিতেই তারা এরকম একটা বিশাল কাঠের ঘোড়া তৈরি করল,,, ভান করল এমন যে আমরা তো তোমাদের পরাজিত করতে পারিনাই, তাই চলে যাচ্ছি, আর যাবার আগে তোমাদের সুর্য দেবতার জন্যে একট উপহার রেখে গেলাম।কিন্তু তার ভিতরেই ছিল ধোকাবাজি,মানে ফলস চেম্বার।ট্রয়ের মানুশ সরল বিশ্বাসে এই উপহার নগরের ভিতর প্রবেশ করালো।ফলাফল এর ভিতরে অবস্থান করা সৈন্যরা রাতের অন্ধকারে বের হয়ে এসে নগরের দরজা খুলে দিল। আর ততক্ষনে এথেনিয়ানরা এসে নগরে প্রবেশ করে এক রাতেই সব ধ্বংস করে ফেলে।তাদের সেই গিফট করা ঘোড়ার থেকেই আমাদের এই ভাইরাসের নাম করন করা হয়েছে ট্রোজান হর্স। কারন এই ভাইরাস টাও ঠিক সেই কাঠের ঘোড়াটির মতই কাজ করে।
সরল মনে আপনি হয়ত আপনার কোন দুষ্ট বন্ধুর দেওয়া কোন লিংক এ ক্লিক করলেন, আর আপনার কম্পিউটার এর পুরো নিয়ন্ত্রন সে নিয়ে নিল।কিন্তু আপনি টেরও পাবেন না। হ্যা টের পাবেন, যখন আপনার ক্ষতির ষোলকলা পুর্ণ হবে।এই ভাইরাস টি আপনার সম্মতি ছাড়া পিসিতে কাজ করতে পারে না।একেবারে ট্রয়বাসি দের মত,তারা যদি নগরে ঘোড়াটি না ঢোকাত, তবে তাদের এই অবস্থা হত না। অনেকটা খাল কেটে কুমির আনার মত।
আপনার পিসিতে প্রবেশ করে সে আপনার সকল কাজে যেমন নজরদারি করতে পারে,তেমনি আপনার ব্যবহার করা ফাইল, অথবা পাসওয়ার্ড বা আপনার অন্যান্য ফাইল পত্র পাঠিয়ে দিতে পারে অন্যের কাছে।
আমরা ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ইংরেজি বইয়ে একটা কথা পড়েছিলাম,, "Prevention is better than cure" এই ভাইরাস টি থেকে বাচার জন্যে প্রিভেনটিভ মিজারে কাজ করাই জরুরি, কারন একবার আক্রান্ত হলে বাচার কোন রাস্তা নাই, উইন্ডোজ সেট আপ দেয়া ছাড়া। আবার কিছু ট্রোজান ভাইরাস আছে যারা আপনার RAM এ রয়ে যায়।সেট আপ দিলেও কাজ হয় না।
এ ক্ষেত্রে আমরা যা করতে পারি, তা হল,প্রথমত কোন ধরনের অপরিচিত ওয়েবসাইটের পক্ষ থেকে আসা ইমেইল এর লিনক এ ক্লিক না করা।দ্বিতীয়ত, আমদের কাছে যদি কোন বন্ধু কোন ফাইল এর লিনক পাঠায় তবে তার থেকে নিশ্চিত হয়ে নেয়া।তৃতীয়ত, অপ্রয়োজনীয় এবং অপরিচিত বিভিন্ন application ব্যাবহার না করা এবং চতুর্থত( অপারেটিং সিস্টেম) পারলে লিনাক্স না পারলে উইন্ডোজের আপডেট ভার্সন অন্তত পক্ষে উইন্ডোজ ৮ ও ১০ ব্যাবহার করা।ইত্যাদি।
আজ এ পর্যন্তই। ভাল থাকবেন।
পোস্টটি লিখেছেন- মারুফ ভাই
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন