হানিফ পরিবহনের সুপারভাইজার নির্মমভাবে খুন করল নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকে

বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্ছ্বল-প্রাণবন্ত এক ছাত্রকে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করা হয়েছে। বাড়ি থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফেরার পথে সড়কে আহত ওই ছাত্রকে নির্দয়ভাবে খালে ফেলে দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। চিকিৎসার কোন ব্যবস্থা না করে এমন হত্যাকাণ্ড নিয়ে জাতির বিবেক নাড়া দিলেও হত্যাকারীদের হৃদয় স্পর্শ করেনি।
নির্মমভাবে খুন নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্রের নাম সাইদুর রহমান পায়েল। হত্যার ঘটনায় আরও একজন খুনি নির্দয় বর্ণনা দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার হানিফ পরিবহনের চালক জামাল হোসেন ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। জবানবন্দি রেকর্ড করেন মুন্সীগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কুশপতি বিশ্বাস। এর আগে ওই বাসের সুপারভাইজার হত্যার বর্ণনা দিয়েছিলেন।
বাসচালক স্বীকার করেন, বাসের অটো দরজার সঙ্গে ধাক্কা লেগে পায়েল নামে ওই ছাত্র পড়ে যান। এতে তার নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বের হতে থাকে। মারা গেছেন ভেবে পাশের ভাটের চর সেতু থেকে নিচের খালে পায়েলকে ফেলে দিয়ে গাড়ি চালিয়ে ঢাকায় চলে আসেন তারা।
এর আগে প্রধান আসামি হানিফ পরিবহনের সুপারভাইজার জনি গত বুধবার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তবে মামলার অন্য আসামি হেলপার ফয়সাল হোসেন এখনো ঘটনা স্বীকার করেনি। ফলে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ তাকে আদালতে পাঠিয়েছে। পরবর্তী কর্মদিবসে তার রিমান্ড শুনানি হবে বলে গজারিয়া থানার ওসি হারুন-অর-রশীদ জানান।
মুন্সীগঞ্জের কোর্ট ইন্সপেক্টর হেদায়েতুল ইসলাম ভূঁইয়া জানান, বর্তমানে তিন আসামিকেই মুন্সীগঞ্জ জেলা কারাগারে রাখা হয়েছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম পিপিএম। এ সময় একই বাসে থাকা পায়েলের বন্ধু মহিউদ্দিন শান্ত ও হাকিমুর রহমান আদর উপস্থিত থেকে ঘটনার বর্ণনা দেন। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গজারিয়া ও সদর সার্কেল) খন্দকার আশফাকুজ্জামান, সহকারী পুলিশ সুপার (সদর) রাজিবুল ইসলাম, ডিবির ওসি ইউনুচ আলী, ডিআইও-১ নজরুল ইসলাম, গজারিয়া থানার ওসি হারুন-অর-রশীদ, গজারিয়া থানার ওসি (অপারেশন) মামুন আল রশীদ প্রমুখ।

পুলিশ সুপার জানান, ঘটনার দিন গত শনিবার ভোর রাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের গজারিয়ার ভাটেরচরের কাছে যানজট সৃষ্টি হয়। এ সময় পায়েল প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বাস থেকে নিচে নামেন। কিন্তু তিনি আসার আগেই জ্যাম ছুটে যায় এবং গাড়ি ছেড়ে দেয়। পায়েল গাড়ির পেছন পেছন দৌড়াতে থাকেন। সুপারভাইজার তাঁকে দেখে চালককে জানায়। পরে গাড়ি থামানো হয়। পায়েলকে গাড়িতে তুলতে অটো গেট খুলতেই সজোরে পায়েলের নাকে মুখে আঘাত লাগে। প্রচণ্ড ধাক্কায় নিচে সড়কে পড়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন পায়েল। সুপারভাইজার দ্রুত চালককে ঘটনা জানায়। পরে চালক জামাল হোসেন ড্রাইভিং সিট থেকে নেমে আসে। চালক জামাল, সুপারভাইজার জনি ও হেলপার ফয়সালের সঙ্গে পরামর্শ করে।
গাড়িতে না তুলে রক্তাক্ত পায়েলকে জীবিত অবস্থায়ই চেংদোলা করে নিয়ে ভাটেরচর ব্রিজের ওপর থেকে খালে ফেলে দেয়া হয়। তখন ভোর প্রায় ৪টা। যাত্রীরা সবাই ঘুমিয়ে ছিল।
গজারিয়া থানার ওসি হারুন-অর-রশীদ জানান, পায়েল জীবিত ছিল। এর স্পষ্ট প্রমাণ হচ্ছে, পায়েল মৃত্যুর আগে ১০ থেকে ১৫ কেজি পানি খেতে খেতে ডুবে যান। তার পেটে পানি ছিল। ময়নাতদন্ত এবং সুরতহাল রিপোর্টেও তা উল্লেখ রয়েছে। এ ছাড়া রাস্তায় পড়ে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন তাও বোঝা যায় পায়েলের মুখে পিচঢালা রাস্তার পিচসহ ছোট পাথর লেগেছিল। পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, এই নির্মম বিবরণ ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দিয়েছে চালক জামাল হোসেন।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আইক্লাউড লক কি? লক বাইপাস করার উপায়?

NSU MGT 314 (Supply Chain/ Production Management), Few Questions and answers

ওয়াইফাই পাসওয়ার্ড চোরদের ব্লক করুন এক নিমিষেই