চারিদিকে ই-কমার্স খোলার ধুম বনাম বাস্তবতা!
হুট করেই অনলাইন প্ল্যাটফর্ম বা ই-কমার্স এ নামতে নেই, নামার আগে অবশ্যই অভিজ্ঞ কারো সাথে পরামর্শ এবং বাজার যাচাই বাছাই করে নামা উচিৎ। একই সাথে পণ্য নির্বাচন এবং ক্রয়ের ক্ষেত্রেও সাবধানতা অবলম্বন করা উচিৎ। কখনই অধিক মূল্যে প্রোডাক্ট কিনতে নেই, কোন জিনিষের বাজার ঊর্ধ্বমুখী হলেই যে ভবিষ্যতে সে জিনিষের বাজার ভালো হবে এমনটা আশা করতে নেই।
ঘটনা এক-
লক ডাউনের সময় নাফিস সিদ্ধান্ত নিল সে মাস্ক বেচবে। যেই ভাবা সেই কাজ। টাকা পয়সা গোছাতে গোছাতে ১ মাস লেগে গেল। মাস্ক কিনতে কিনতে আরো ১০ দিন। এরপরে মাস্ক বিক্রির উদ্দেশ্যে ফেইসবুকে একটা পেইজ খুলল। পরিচিত এক বড় ভাইয়ের কার্ডে ডলার থাকে। তিনি বুস্টিং করে দেন, দুনিয়ার সব কাস্টমার নাকি তার চেনা। ফেইসবুক পেইজে KN95 মাস্কের বিজ্ঞাপন দিল
"মূল্য ৩৫০ টাকা পিস"
ওমা, পাবলিক কমেন্টে এসে বলতে লাগল "এই মাস্ক ওমুক পেইজে ২৫০ টাকায় বেচে আর আপনারা ৩৫০তে বেচেন! ডাকাতির একটা সীমা আছে"
কেউ কেউ কমেন্ট করছে "ডাকাতি করতে চাইলে পিস্তল নিয়ে নেমে পড়ূন। এত দামে কেন মাস্ক বেচবেন। মানুষের অসহায়ত্বের কথা মাথায় নাই? আল্লাহ বিচার করবে!"
আরেকজন কমেন্ট করল "সেইম মাস্ক ২৫০ টাকায় কিনতে চাইলে আমাদের পেইজে আসুন" চান্সে আরেকটা পেইজের বিজ্ঞাপন মেরে দিল!
নাফিসের মাথায় হাত। যে মাস্ক সে কিনেছে ২৮৫ টাকায় সেই মাস্ক কীভাবে অন্যেরা ২৫০ টাকায় বেচে!"
নাফিস বেশ কয়েকটা পেইজ ঘুরে দেখে মাস্কের দাম আসলেই ৩০০ টাকার নিচে। কেউ কেউ ২০০ টাকাতেও বেচে।
উপরের ঘটনা আজ থেকে ১ মাস আগের। সেই মাস্ক বিক্রেতা ৪০ হাজার টাকা দিয়ে মাস্ক কিনেছিল। সেই মাস্ক বিক্রি করতে হয়েছে মাত্র ১২ হাজার টাকায়! নেট লস ২৮ হাজার টাকা। আর বুস্টিংওয়ালার টাকা দিতে পারেনি।
ঘটনা দুই -
পালস অক্সিমিটারের প্রচুর চাহিদা দেখে জালাল সাহেব তার জীবনের সঞ্চিত সকল সঞ্চয় একত্রিত করে ১৫ লাখ টাকার পালস অক্সিমিটার আমদানী করলেন। কে যেন ওনাকে বললেন ফেইসবুক পেইজে খুলে বুস্টিং দিলেই সেল আর সেল, টাকা আর টাকা! নিজের আমদানী লাইসেন্স নেই, পরিচিত একজনের মাধ্যমে আমদানী করলেন। তিনি যখন চায়না থেকে কিনেছেন তখন বাংলাদেশে এটা বিক্রি হচ্ছিল ৩ হাজার টাকায়। জালাল সাহেব চায়না থেকে কিনেছেন ১৫০০ টাকায়, ঢাকায় পৌছে দেয়ার খরচ সহ। তিনি ভাবলেন এখন ওনার নিয়মিত ব্যবসা কপড়ের দোকান বন্ধ। ১ হাজার অক্সিমিটার যদি ৫০০ টাকা পাইকারি লাভে বেচা যায় তাতেও ৫ লাখ টাকা লাভ থাকে। যা ওনার স্বাভাবিকভাবেই ৭/৮ মাস ইনকামের সমান। ওমা! অক্সিমিটার দেশে আসার পর পরই দেশে অক্সিমিটারের দাম পড়ে যায়। ফেইসবুকে অক্সিমিটারের কাস্টমারের চেয়ে বিক্রেতা বেশি। উনি যেহেতু পুরনো ব্যবসায়ী তাই ৫০/১০০ টাকা গড় লসে দ্রুত সব অক্সিমিটার বেচে দিলেন। ওনার অনলাইনে বেচার স্বাধ মিটে গেল।
ঘটনা তিন -
শেষ এক মাসে মিনিমাম ১০ জন লোক আমাকে ফোন করে বলেছেন ওনারা বাংলাদেশে মাস্কের ফ্যাক্টরি চালু করতে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে ১০ লাখ টাকা ইনভেস্ট করেছেন। ১ মাসের মধ্যে মাস্কের ফ্যাক্টরি চালু হবে। একজন তো আমাকে হিসাব দেখিয়ে দিলেন দিনেই ওনার ইনকাম হবে ৫০ হাজার টাকা!
উনি মনে করেছেন উনি ছাড়া দেশে আর কেউ মাস্ক ফ্যাক্টরি খোলেন নাই, তাই তিনি একছত্র আধিপত্য বিস্তার করে মাস্কের ব্যবসা করবেন। কিন্তু উনি দুইদিন পর টের পাবেন দেশে কয়দিন পরে মানুষের চেয়ে মাস্ক ফ্যাক্টরির সংখ্যা বেশি হবে। কেউ কারো কাছে মাস্ক বেচতে পারবে না। মাঝখান দিয়ে নিজের জমানো টাকা শেষ করলেন আর কী!
এভাবে অবশ্য চায়নারা প্রতি বছর এদেশ থেকে হাজার কোটি টাকায় নিয়ে যায় বাঙালীর ভুলের কারণে।
যে কথা বলছিলাম, আপনারা যারাই ফেইসবুকে পেইজ খুলে কোন প্রোডাক্ট বিক্রি করবেন তারা অবশ্যই জেনে শুনে যাচাই বাছাই করে প্রোডাক্ট সিলেক্ট করবেন। আপনি এখন যে প্রোডাক্টের প্রচুর চাহিদা দেখছেন আগামী মাসে দেখবেন সেই প্রোডাক্টের কাস্টমারের চেয়ে সেলার বেশি। তখন বাধ্য হয়ে আপনি যে দাম মাল কিনেছেন তার চেয়ে কম দামে মাল বেচতে বাধ্য হচ্ছেন।
#বাংলাদেশের_ই_কমার্স
- রাশেদ তূর্য
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন