শাহবাগের সিগন্যাল


প্রখর রোদ্রতাপ, তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি ছুই ছুই। শাহবাগের সিগন্যালে প্রতিদিনের মত শখানেক পার্সেল বাইকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মধ্যবয়সী এক যুবক। আধভেজা টি-শার্ট আর চোখে-মুখে ক্লান্তির ছাপ। এদিকে আসলেই তার ব্যস্ততা বেড়ে যায়, যানজটের শহর বলে কথা কোথায় ৫ মিনিট আর কোথায় ৩০ মিনিট সিগন্যালে পড়ে থাকতে হতে পারে তা তিন বছরের অভিজ্ঞতা থাকলেও বলা মুশকিল। তাছাড়া নির্দিষ্ট সময়ে পার্সেলগুলো না পৌঁছে দিতে পারলে কাস্টমার লক্ষ্মীরাও টেনশনে ভোগে। 

 প্রায় তিন বছর হল, নিজের ছোট ব্যবসাটা ছেড়ে তামিম ডেলিভারির চাকরীটা নিয়েই নিয়েছে। তাহিয়া তাকে বলেছিল, চাকরী ছোট হউক তাও ভালো, ব্যবসায়ের তো কোন নিশ্চয়তা নেই! এদিকে তামিমকে পেয়ে কোম্পানির ম্যানেজার আফজাল সাহেবও বেজায় খুশি, একবার তো বিজ্ঞাপনে কি এলাহি কাণ্ড, " জিন দ্বারা দক্ষিন সিটির মধ্যে মাত্র ১ ঘণ্টায় হোম ডেলিভারি! বিফলে মূল্য ফেরত!" কিন্তু আজ মনে হচ্ছে বিজ্ঞাপনটা একটু আপডেট করা দরকার। 

চারিদিকের ফাঁকা রাস্তা, মনে হয় জনমানবহীন এক পরিত্যাক্ত শহরে জিন-পরীদের কাছে পার্সেল ডেলিভারি করতে হবে তামিমকে! যন্ত্রমানুষ আর কম্বাস্টন ইঞ্জিনের কালো ধোঁওয়ায় যেখানে নিশ্বাস ফেলানো দায় হয়ে দারায় সেখানে আজ প্রান খুলে নিশ্বাস নিতে পারার অনুভূতিটাই অন্যরকম। আজ থেকে নাকি কঠোর লকডাউন, কোন রাস্তার মোড়েই তাকে দাঁড়াতে হয়নি। মাঝে মাঝে কয়েকটা অ্যাম্বুলেন্স আর বাইকের সাই সাই করে ছুটে যাওয়া ছাড়া কিছুই চোখে পড়ছেনা তার। তবে মনে হচ্ছে কয়েকটা অ্যাম্বুলেন্স পিছু নিয়েছে, সাই সাই করে তামিমের দিকেই ছুটে আসছে! ছিনতাইকারী ভেবে গতি বাড়িয়ে যেতে লাগলো তামিম। এই বুঝি নেমে আমাকে ধরবে, কিন্তু শাহবাগের মোড়ে এসেই এই ভুল ভাঙল। সাই সাই করে অ্যাম্বুলেন্সগুলো হাঁসপাতালের জরুরী বিভাগে ছুটে চলছে! হাফ ছেড়ে বাঁচল তামিম, বাইকটা দাঁড় করিয়ে ব্যাগ থেকে বোতলটা বের করে পানির ঝাঁপটা দিতেই সে আরও চমকে গেল। 

এই শাহবাগের মোড়ও থমথমে! চারিদিকে শুধু অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেনের শব্দ? কি হচ্ছে চারিদিকে  -চলবে (অনুগল্প)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আইক্লাউড লক কি? লক বাইপাস করার উপায়?

জীবনে সুখী হতে চান?

Once in a lifetime opportunity for Millennials and Generation Z of Bangladesh